সরল সমীকরণের সমাধান, সমীকরণের বিভিন্ন বিধি ও স্বতঃসিদ্ধসমূহ
বিষয়বস্তু: সমীকরণ (৭ম শ্রেণি গণিত)
এই পাঠে আমরা সরল সমীকরণের সমাধান সম্পর্কে জানবো। সরল সমীকরণের মাধ্যমে আমরা বাস্তব জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারি। তাই এ সম্পর্কিত বিষয়ে জানা থাকা প্রয়োজন। এখানে সরল সমীকরণের সমাধানের জন্য যে সকল বিধি ও স্বতঃসিদ্ধ রয়েছে সেগুলো নিয়ে প্রথমে আলোচনা করবো। এগুলো ঠিকমতো আয়ত্ব করতে পারলে অবশ্যই সরল সমীকরণের সমাধান করতে আর কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া বাস্তব জীবনের বিভিন্ন সমস্যার উপর সমীকরণ গঠন করেও সমাধান করতে সক্ষম হবে।
সরল সমীকরণ এক বা একাধিক চলক বিশিষ্ট হতে পারে। এই আলোচনাতে স্থান পেয়েছে একচলক বিশিষ্ট সরল সমীকরণের সমাধান।
সমীকরণ (Equation) কী?
চলক, প্রক্রিয়া চিহ্ন ও সমান চিহ্ন সংবলিত গাণিতিক বাক্যকে সমীকরণ (Equation) বলে। যেমন,
সরল সমীকরণ কী?
চলকের একঘাত বিশিষ্ট সমীকরণকে সরল সমীকরণ বলে। যেমন,
এটি একটি সরল সমীকরণ। এর একটি মাত্র চলক রয়েছে x , যার ঘাত এক।
সরল সমীকরণের সমাধান করতে যা জানা প্রয়োজন:
সরল সমীকরণের সমাধান এর জন্য আমাদেরকে সমীকরণের মূল, চারটি স্বতঃসিদ্ধ, যোগ ও গুণের বিধি ও সমীকরণের কয়েকটি বিধি সম্পর্কে জানতে হবে। নিচে সরল সমীকরনের সমাধান এর এ সকল বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
সমীকরণের মূল
১। সমীকরণ সমাধান করা মানে চলকের মান বের করা। সমীকরণ সমাধান করে চলকের যে মান পাওয়া যায় তাকে মুল বলা হয়।
২। কোনো সমীকরণ থেকে নির্ণিত মূল উক্ত সমীকরণকে সিদ্ধ করে অর্থাৎ মুলটিকে সমীকরণে বসালে সমীকরণের বামপক্ষ ও ডানপক্ষ সমান হয়।
৩। সমীকরণের সমাধান করার সময় চলককে সাধারনত বামপক্ষে রাখা হয়।
স্বতঃসিদ্ধ সমূহ
১। পরস্পর সমান রাশির প্রতিটির সাথে একই রাশি যোগ করলে যোগফলগুলো পরস্পর সমান থাকে। যেমন,
হলে,
সত্য হবে।
২। পরস্পর সমান রাশির প্রতিটি থেকে একই রাশি বিয়োগ করলে বিয়োগফলগুলো পরস্পর সমান থাকে। যেমন,
হলে,
সত্য হবে।
৩। পরস্পর সমান রাশির প্রতিটিকে একই রাশি দ্বারা গুণ করলে গুণফলগুলো পরস্পর সমান থাকে। যেমন,
হলে,
সত্য হবে।
৪। পরস্পর সমান রাশির প্রতিটিকে শুণ্য ছাড়া যেকোনো একই রাশি দ্বারা ভাগ করলে ভাগফলগুলো পরস্পর সমান থাকে। যেমন,
হলে,
সত্য হবে।
উল্লেখ্য যে, কোনো রাশিকে শুণ্য দ্বারা ভাগ করা যায় না। এটি একটি অসংজ্ঞায়িত বিষয়।
যোগ ও গুণের বিধিসমূহ
১। যোগের বিনিময় বিধি
যেকোনো মান a, b এর জন্য কে
লেখা যাবে। অর্থাৎ
নোট: কে
লেখা যাবে না। তবে
লেখা যাবে।
২। গুণের বিনিময় বিধি
যেকোনো মান a, b এর জন্য কে
লেখা যাবে। অর্থাৎ
৩। গুণের বন্টন বিধি
যেকোনো মান a, b, c এর জন্য কে
বা
লেখা যাবে।
অর্থাৎ
সমীকরণের বিধিসমূহ
১। পক্ষান্তর বিধি
সমীকরণের যেকোনো পদকে একপক্ষ থেকে চিহ্ন পরিবর্তন করে অপরপক্ষে সরাসরি স্থানান্তর করা যায়। একে পক্ষান্তর বিধি বলা হয়।
উদাহরণ-১:
থেকে
লেখা যায়।
পক্ষান্তর বিধির এই উদাহরণটিতে স্বতঃসিদ্ধ-১ প্রয়োগ হয়েছে। অর্থাৎ উভয় পক্ষে একই রাশি 7 যোগ করা হয়েছে।
থেকে
লেখা যায়।
উদাহরণ-২:
থেকে
লেখা যায়।
পক্ষান্তর বিধির এই উদাহরণটিতে স্বতঃসিদ্ধ-২ প্রয়োগ হয়েছে। অর্থাৎ উভয় পক্ষ থেকে একই রাশি 4x বিয়োগ করা হয়েছে।
থেকে
লেখা যায়।
উল্লেখ্য যে, উভয় উদাহরণে সমীকরণ সমাধানের সাধারন নিয়ম অনুযায়ী চলককে বামপক্ষে রেখে সরলীকরণ করা হয়েছে।
চিহ্ন পরিবর্তন: কোনো পদ পক্ষান্তরের সময়
- পদটি ধনাত্মক ( + ) থাকলে পক্ষান্তরের পর ঋনাত্মক ( – ) হয়।
- পদটি ঋনাত্মক ( – ) থাকলে পক্ষান্তরের পর ধনাত্মক ( + ) হয়।
২। যোগের বর্জন বিধি
সমীকরণের উভয় পক্ষ থেকে একই চিহ্নযুক্ত সদৃশ পদ সরাসরি বর্জন করা যায়। একে যোগের (বা বিয়োগের) বর্জন বিধি বলা হয়।
উদাহরণ-১:
থেকে
লেখা যায়।
যোগের বর্জন বিধির এই উদাহরণটিতে স্বতঃসিদ্ধ-২ প্রয়োগ হয়েছে। অর্থাৎ উভয় পক্ষ থেকে একই রাশি 5 বিয়োগ করা হয়েছে।
উদাহরণ-২:
থেকে
লেখা যায়।
যোগের বর্জন বিধির এই উদাহরণটিতে স্বতঃসিদ্ধ-১ প্রয়োগ হয়েছে। অর্থাৎ উভয় পক্ষে একই রাশি 4 যোগ করা হয়েছে।
৩। গুণের বর্জন বিধি
সমীকরণের উভয় পক্ষ থেকে সাধারন উৎপাদক সরাসরি বর্জন করা যায়। একে গুণের বর্জন বিধি বলা হয়।
উদাহরণ-১:
থেকে
লেখা যায়।
গুণের বর্জন বিধির এই উদাহরণটিতে স্বতঃসিদ্ধ-৪ প্রয়োগ হয়েছে। অর্থাৎ উভয় পক্ষকে একই রাশি 5 দ্বারা ভাগ করা হয়েছে।
থেকে
লেখা যায়।
উদাহরণ-২:
থেকে
লেখা যায়।
গুণের বর্জন বিধির এই উদাহরণটিতে স্বতঃসিদ্ধ-৪ প্রয়োগ হয়েছে। অর্থাৎ উভয় পক্ষকে একই রাশি 2 দ্বারা ভাগ করা হয়েছে।
থেকে
লেখা যায়।
৪। আড়গুণন বিধি
সমীকরণের বামপক্ষের লব ও ডানপক্ষের হরের গুণফল বামপক্ষের হর ও ডানপক্ষের লবের গুণফলের সমান লেখা যায় । একে আড়গুণন বিধি বলা হয়। অর্থাৎ
বামপক্ষের লব ডানপক্ষের হর = বামপক্ষের হর
ডানপক্ষের লব
উদাহরণ:
থেকে
লেখা যায়।
আড়গুণন বিধির এই উদাহরণটিতে স্বতঃসিদ্ধ-৩ প্রয়োগ হয়েছে। অর্থাৎ উভয় পক্ষকে একই রাশি 10 ( হর 2 ও 5 এর ল.সা.গু ) দ্বারা গুণ করা হয়েছে।
থেকে
লেখা যায়।
৫। প্রতিসাম্য বিধি
সমীকরণের বামপক্ষের সবগুলো পদকে ডানপক্ষে এবং ডানপক্ষের সবগুলো পদকে বামপক্ষে একই সাথে চিহ্ন পরিবর্তন ছাড়াই স্থানান্তর করা যায় । একে প্রতিসাম্য বিধি বলা হয়।
উদাহরণ:
থেকে
লেখা যায়।
উদাহরনটিতে বামপক্ষের সবগুলো পদ ডানপক্ষে আর ডানপক্ষের সবগুলো পদ বামপক্ষে চিহ্নসহ স্থানান্তরিত হয়েছে। কোনো পদেরই চিহ্ন পরিবর্তন হয়নি।
একটি সরল সমীকরণের সমাধান ব্যাখ্যা:
সমাধান:
বা, [বামপক্ষে গুণের বন্টন বিধি প্রয়োগ হয়েছে।]
বা, [পক্ষান্তর বিধি প্রয়োগ হয়েছে।]
বা,
বা, [স্বতঃসিদ্ধ-৩ প্রয়োগ হয়েছে। অর্থাৎ একই রাশি (-1) দ্বারা উভয় পক্ষকে গুণ করা হয়েছে।]
[গুণের বর্জন বিধি প্রয়োগ হয়েছে। অর্থাৎ উভয় পক্ষ থেকে সাধারন উৎপাদক 2 বর্জন করা হয়েছে। এটি করা হয়েছে উভয় পক্ষকে 2 দ্বারা ভাগ করে।]
সমীকরণের মূল
শুদ্ধি পরীক্ষা:
মূলটি সমীকরণের উভয়পক্ষে বসিয়ে বামপক্ষ ও ডানপক্ষের মান সমান পাওয়া গেল।
সুতরাং সমাধানটি শুদ্ধ হয়েছে।
এই আলোচনাতে সরল সমীকরণের সমাধান এর জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বিষয়বস্তুকে সহজবোধ্য করার জন্য বিভিন্ন উদাহরণ দেয়া হয়েছে। আশা করি এটি ভালভাবে আয়ত্ব করলে সরল সমীকরণের সমাধান করতে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
দারুন হয়েছে
Thanks,
i red that you say. thank you for help us
অনেক উপকারী তথ্য, যিনি দিয়েছেন তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
দোয়া করি যেন ভবিষ্যতে এরকম আরও তথ্য দিতে পারেন। আবারও অসংখ্য ধন্যবাদ।
Thanks