লগারিদম (Logarithm)
লগারিদম (Logarithm) নিয়ে আলোচনা করবো এখানে। লগারিদম কী? লগারিদমের সংজ্ঞা কী? Logarithm শব্দটির উৎপত্তি কোথা থেকে? এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আলোচনা শুরু না করে অন্যভাবে শুরু করলেই মনে হয় ভালো হবে। কারণ আলোচনার শুরুতেই সংজ্ঞাটা বুঝতে একটু কষ্ট হলেও হতে পারে। তাই লগারিদমের সংজ্ঞাটা এখন না দিয়ে শেষে দিবো। কারণ তখন লগারিদম কী তা অলরেডি বুঝা হয়ে যাবে। তাহলে সংজ্ঞা, উৎপত্তি এগুলো নিয়ে শেষের দিকে কথা বলা-ই, মনে হয় ভালো হবে। তাহলে শুরুটা করবো কী দিয়ে? একটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা যাক।
প্রশ্নটা হলো, ‘কয়টি 2 কে পরস্পর গুণ করলে গুণফল 16 হবে’?
উত্তরটা নিশ্চয়ই ‘4টি 2 কে পরস্পর গুণ করলে গুণফল 16 হবে’। অর্থাৎ
এখন, যা দাড়ালো তা হলো:
উপরের প্রশ্নটি যদি লগারিদমকে করা হয় তাহলে লগারিদম তার উত্তর দিবে নিম্নরূপে:
লগারিদম এখানে বলছে, 16 পাওয়ার জন্য 2 কে গুণ করতে হবে 4 বার।
লগারিদম ও সূচকের সম্পর্ক
তাহলে সূচক ও লগারিদমের মধ্যে একটা ঘনিষ্ট সম্পর্ক আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই সম্পর্কটিকে চিত্রের মাধ্যমে দেখে নিতে পারি:

চিত্রটিতে যে দুইটি বিষয় আমরা দেখতে পাচ্ছি তা আসলে একই জিনিসের দুইটি চেহারা ছাড়া আর কিছু নয়। এটাই হলো কথা যে, লগারিদম সূচকীয় রাশির মান নির্ণয় করার জন্য ব্যবহার করা হয়। লগারিদমের সাহায্যে খুব সহজেই বড় বড় সংখ্যার গুণফল, ভাগফল ইত্যাদি নির্ণয় করা যায়।
তাহলে, সূচকীয় রাশি আর লগারিদমের মধ্যকার এই সম্পর্কের আরো কিছু উদাহরণ দেখি:
উল্লেখ্য যে, logarithm কে সংক্ষেপে log লেখা হয়।
লগারিদমের আছে 3টি সংখ্যা
লগারিদম 3টি সংখ্যাকে ব্যবহার করে হিসাব নিকাশের কাজ করে। সংখ্যা তিনটিকে বলা হয় Base, Argument ও Exponent।
- Base
লগারিদমের Base (ভিত্তি) হলো সেই সংখ্যা যাকে গুণ করার মাধ্যমে একটি নতুন সংখ্যা পাওয়া যায়। এখানে, 2 হলো Base ।
2. Argument
লগারিদমের Argument হলো সেই সংখ্যা যা Base গুণ করার মাধ্যমে গুণফল হিসেবে পাওয়া যায়। এখানে 16 হলো Argument।
3. Exponent
লগারিদমে Base কে যতবার গুণ করার ফলে Argument পাওয়া যায় তা হলো Exponent (সূচক) । এখানে 4 হলো Exponent ।

লগারিদমের শর্তসমূহ
তাহলে, আমরা এরই মধ্যে নিশ্চয়ই বুঝে গেছি:
হলে
অথবা বিপরীতক্রমে
হলে
তবে, a (Base), N (Argument) ও x (Exponent) এর উপর কিছু শর্ত আরোপ করা আছে। শর্তগুলো সম্পর্কে জেনে নেই।
Base (a) এর উপর শর্ত:
1 ছাড়া যেকোনো ধনাত্মক সংখ্যাকে Base হিসেবে গণ্য করা যাবে।
0 ও ঋণাত্মক সংখ্যাকে Base হিসেবে গণ্য করা যাবে না।
তাহলে, হলে
হবে।
Argument (N) এর উপর শর্ত:
যেকোনো ধনাত্মক সংখ্যাকে Argument হিসেবে গণ্য করা যাবে।
তাহলে, হলে
হবে।
Exponent (x) এর উপর শর্ত:
ধনাত্মক সংখ্যা, ঋণাত্মক সংখ্যা এমনকি 0 যেকোনো সংখ্যাকে Exponent হিসেবে গণ্য করা যাবে।
তাহলে, হলে
হবে। এখানে, x যেকোনো সংখ্যা।
Base হিসেবে 0 (শূণ্য) গ্রহণযোগ্য নয় কেন?
এর অর্থ
এখন, a (Base) এর স্থানে আমরা যদি 0 (শূণ্য) বসাই, তাহলে 0 কে আমরা যতবারই গুণ করি না কেন অর্থাৎ 0 এর উপর আমরা যত সূচকই দেই না কেন গুণফল (Argument) কিন্তু সবসময় 0 হবে।
অর্থাৎ
যেহেতু 0 কে বিভিন্ন সংখ্যকবার গুণ করলেও গুণফল (Argument) একই থাকছে, তাই Base হিসেবে 0 (শূণ্য) গ্রহণযোগ্য নয়।
Base হিসেবে 1 গ্রহণযোগ্য নয় কেন?
এর অর্থ
এখন, a (Base) স্থানে আমরা যদি 1 বসাই, তাহলে 0 এর মতো 1 কেও আমরা যতবারই গুণ করি না কেন অর্থাৎ 1 এর উপর যত সূচকই আমরা বসাই না কেন গুণফল (Argument) কিন্তু সবসময় 1 হবে।
অর্থাৎ
যেহেতু 1 কে বিভিন্ন সংখ্যকবার গুণ করলেও গুণফল (Argument) একই থাকছে, তাই Base হিসেবে 1 গ্রহণযোগ্য নয়।
Base হিসেবে ঋণাত্মক মান গ্রহণযোগ্য নয় কেন?
এর অর্থ
এখন, a (Base) এর স্থানে আমরা যদি ঋণাত্মক মান বসাই, তাহলে বাস্তব মান পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই উদাহরণটি লক্ষ্য করি:
হলে,
যা আমাদেরকে কোনো বাস্তব মান দেয় না।
সুতরাং ভিত্তি হিসেবে ঋণাত্মক মান গ্রহণযোগ্য নয়।
তাহলে, মোট কথা “1 ছাড়া যেকোনো ধনাত্মক সংখ্যা Base হিসেবে গ্রহণযোগ্য। 0 ও ঋণাত্মক সংখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়”।
ভিন্ন ভিন্ন Base এর ক্ষেত্রে একই সংখ্যার লগারিদম ভিন্ন ভিন্ন হয়
উদাহরণ
ঋণাত্মক সংখ্যার লগের বাস্তব মান নেই
এর অর্থ হলো
আমরা জানি, 1 ছাড়া সকল ধনাত্মক সংখ্যা লগারিদমের Base হিসেবে গ্রহণযোগ্য। এখানে, a (Base) এর উপর x সূচক (Exponent) বসালে ফলাফল N (Argument) পাওয়া যায়। এখন Base যেহেতু ধনাত্মক তাই ধনাত্মক একটি সংখ্যার উপর সূচক হিসেবে আমরা যে কোনো সংখ্যা (ধনাত্মক বা ঋণাত্মক বা 0) বসাই না কেন, ফলাফল (Argument) সর্বদা ধনাত্মকই আসবে।
উদাহরণ লক্ষ্য করি:
হলে,
অর্থাৎ
এখানে, 125 হলো Argument যা ধনাত্মক সংখ্যা।
2. হলে,
অর্থাৎ
এখানে, 16 হলো Argument যা ধনাত্মক সংখ্যা।
3. হলে,
[যেকোনো বাস্তব সংখ্যার সূচক 0 হলে ফলাফল 1 হয়।] অর্থাৎ
এখানে, 1 হলো Argument যা ধনাত্মক সংখ্যা।
তাহলে, সকল ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পেলাম Argument ধনাত্মক।
অতএব, Base 1 ছাড়া যেকোনো ধনাত্মক সংখ্যা এবং Exponent (সূচক) যেকোনো সংখ্যা হলে Argument সর্বদা ধনাত্মক।
অর্থাৎ যেকোনো সংখ্যা হলে,
ধনাত্মক সংখ্যা, যেখানে,
তাহলে, মোট কথা “লগারিদম সর্বদা ধনাত্মক বাস্তব মানের জন্য সংজ্ঞায়িত। ঋণাত্মক সংখ্যার লগের বাস্তব মান নেই।“
0 (শূণ্য) এর লগের বাস্তব মান নেই
এর অর্থ হলো
যেহেতু a (Base) 1 ছাড়া যেকোনো ধনাত্মক সংখ্যা তাই a এর উপর x (Exponent) এর মান আমরা ধনাত্মক, ঋণাত্মক বা 0 যা-ই বসাই না কেন N (Argument) কিছুতেই 0 হবে না। Argument সর্বদাই ধনাত্মক সংখ্যা-ই হবে।
উদাহরণ
এর অর্থ হলো
এর অর্থ হলো
এর অর্থ হলো
এর অর্থ হলো
[যেকোনো বাস্তব সংখ্যার সূচক 0 হলে ফলাফল 1 হয়।]
উদাহরণ থেকে দেখা যাচ্ছে যে, Base এর উপর আরোপিত শর্ত অনুসরণ করে সূচক হিসেবে ধনাত্মক, ঋণাত্মক, 0 (শূণ্য) যা-ই নেয়া হলো সকল ক্ষেত্রে ফলাফল (Argument) ধনাত্মক সংখ্যা-ই এসেছে। ফলে, বুঝাই যাচ্ছে Argument সর্বদা ধনাত্মকই আসবে, 0 আসার কোনো সুযোগ নেই।
অতএব, 0 (শূণ্য) এর লগের বাস্তব মান নেই।
লগারিদমে ভগ্নাংশ
ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে আমরা সহজেই ভগ্নাংশ সংশ্লিষ্ট লগারিদম হিসাব করতে পারি।
উদাহরণ:
10 ভিত্তিক লগ 35 এর মান নির্ণয়
ক্যালকুলেটর চেপে হিসাব করলে পাওয়া যায়

উল্লেখ্য যে, ক্যালকুলেটরের log বাটনটি 10 ভিত্তিক লগারিদমের হিসাবের জন্য ব্যবহৃত হয়।
লগারিদম পদ্ধতি
লগারিদম পদ্ধতি আছে দুই ধরণের। যথা:
- সাধারণ লগারিদম (Common Logarithm)
- স্বাভাবিক লগারিদম (Natural Logarithm)
সাধারণ লগারিদম (Common Logarithm)
1624 সালে ইংল্যান্ডের গণিতবিদ Henry Briggs (1561-1630) 10 কে ভিত্তি ধরে লগ টেবিল তৈরি করেন। তার এই লগারিদমই সাধারণ লগারিদম হিসেবে পরিচিত। এছাড়া এটিকে 10 ভিত্তিক লগারিদম, ব্রিগস লগারিদম বা ব্যবহারিক লগারিদম নামেও অভিহিত করা হয়। এই পদ্ধতির লগারিদমকে প্রকাশ করা হয়
স্বাভাবিক লগারিদম (Natural Logarithm)
1614 সালে স্কটল্যান্ডের গণিতবিদ John Napier (1550-1617) e (একটি অমূলদ সংখ্যা e = 2.71828. . . ) কে ভিত্তি ধরে লগারিদমের উপর বই প্রকাশ করেন। তার এই লগারিদমই স্বাভাবিক লগারিদম হিসেবে পরিচিত। এছাড়া এটিকে e ভিত্তিক লগারিদম, নেপিরিয়ান লগারিদম বা তত্ত্বীয় লগারিদম নামেও অভিহিত করা হয়। এই পদ্ধতির লগারিদমকে প্রকাশ করা হয়
বা
lnx কে পড়তে হবে ell-enn of x অথবা lawn of x
লগারিদমে ভিত্তি উল্লেখ না থাকলে
log এর ভিত্তি হিসেবে 10 ধরতে হবে।
[base 10 logx]
ln এর ক্ষেত্রে ভিত্তি হিসেবে e ধরতে হবে।
[base e logx]
ক্যালকুলেটরে লগারিদম বাটন

ক্যালকুলেটরে 10 ভিত্তিক লগারিদম (সাধারণ লগারিদম) হিসাব করার জন্য রয়েছে
log বাটন।
ক্যালকুলেটরে e ভিত্তিক লগারিদম (স্বাভাবিক লগারিদম) হিসাব করার জন্য রয়েছে
ln বাটন।
ঋণাত্মক লগারিদম
লগারিদম শুধু গুণের মাধ্যমেই কাজ করে তা নয় লগারিদম ভাগের মাধ্যমেও কাজ করে। ভাগ হলো গুণের বিপরীত। উল্লেখ্য যে, 1 কে যতবার 10 দিয়ে গুণ করা হয় তা 10 ভিত্তিক লগারিদমের ধনাত্মক মান। অন্যদিকে 1 কে যতবার 10 দিয়ে ভাগ করা হয় তা 10 ভিত্তিক লগারিদমের ঋণাত্মক মান।
উদাহরণ:
10000
1000
100
10
1
0.1
0.01
0.001
0.0001
Logarithm শব্দটির উৎপত্তি
দু’টি গ্রিক শব্দ Logos ও Arithmas থেকে Logarithm শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। Logos শব্দটির অর্থ হলো আলোচনা এবং Arithmas শব্দটির অর্থ হলো সংখ্যা। তারমানে Logarithm এর সম্পূর্ণ অর্থ দাড়ালো সংখ্যা নিয়ে আলোচনা।
লগারিদমের সংজ্ঞা
যদি হয় যেখানে,
তবে x কে b এর a ভিত্তিক লগারিদম বলা হয়। যেখানে,
এর মান (1 থেকে 10 পর্যন্ত)
বা
এর মান (1 থেকে 10 পর্যন্ত)
or
নিজে করি:
লগারিদমে কী হবে ?
লগারিদমে কী হবে ?
লগারিদমে কী হবে ?
লগারিদমে কী হবে ?
লগারিদমে কী হবে ?
x = ?
x = ?
x = ?
মান কত?
কী ভুল আছে?
Excellent presentation.Easier and lighter to understand. Thanks author!
Awesome . এত স্পষ্ট ও ঝরঝরে আলোচনা আমি আগে কোনো দিন দেখেনি ৷ ধন্যবাদ আলোচক কে